দেশের সবচেয়ে ভালো সড়ক নেটওয়ার্ক ফরিদপুরে

Passenger Voice    |    ০৭:২৯ পিএম, ২০২১-০৭-০৩


দেশের সবচেয়ে ভালো সড়ক নেটওয়ার্ক ফরিদপুরে

দেশের সবচেয়ে ভালো সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে ফরিদপুর সড়ক বিভাগ। ফরিদপুরের ৯৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ সড়কই রয়েছে ভালো ও চলনসই অবস্থায়। জেলার ৩৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নেটওয়ার্কের মধ্যে ভাঙাচোরা দশায় রয়েছে মাত্র ১৩ কিলোমিটার। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য। সংস্থাটির প্রকৌশলীরা বলছেন, বিগত চার-পাঁচ বছরে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এ সাফল্য এনে দিয়েছে ফরিদপুর সড়ক বিভাগকে।

সওজের তথ্য বলছে, ফরিদপুরে জাতীয় মহাসড়ক আছে ১১০ কিলোমিটার। জেলা মহাসড়ক ২৩২ কিলোমিটার। কোনো আঞ্চলিক সড়ক নেই। কয়েক বছর আগেও এসব সড়কের বেশির ভাগই ছিল ভাঙাচোরা দশায়। অবস্থা পাল্টাতে শুরু করে জেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, বরিশাল জোন, ফরিদপুর অংশের কাজ শুরুর পর। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার বেশির ভাগ সড়ক উন্নয়ন করা হয়েছে। এর বাইরে আলাদা প্রকল্পের মাধ্যমে ফরিদপুর (বদরপুর)-সালথা-সোনাপুর-মুকসুদপুর সড়ক, সস্রাইল-আলফাডাংগা সংযোগ সড়কসহ ফরিদপুর (মাইজকান্দি)-বোয়ালমারী-গোপালগঞ্জ (ভাটিয়াপাড়া) সড়কের উন্নয়ন করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ হওয়ায় জেলার সব সড়ক ভালো অবস্থায় চলে এসেছে বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমরান ফারহান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এ ভালো সড়ক নেটওয়ার্কের মান ধরে রাখা। এজন্য সড়ক উন্নয়নের পাশাপাশি সেগুলোর ‘রুটিন’ ও ‘পিরিয়ডিক’ রক্ষণাবেক্ষণকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। এখনো জেলার যেসব স্থানে সড়ক খারাপ অবস্থায় রয়েছে, সেগুলোও মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সওজের মহাসড়ক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ (এইচডিএম) সার্কেলের সর্বশেষ জরিপ বলছে, ফরিদপুরের পর সবচেয়ে ভালো সড়ক রয়েছে মাগুরা সড়ক বিভাগ। ২৩১ কিলোমিটারের মধ্যে জেলায় ভালো সড়কের পরিমাণ ২১৮ কিলোমিটার বা ৯৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। একইভাবে চুয়াডাঙ্গার ৯৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, মাদারীপুরে ৯৩ দশমিক ১১ শতাংশ, কক্সবাজার সড়ক বিভাগে ভালো সড়কের পরিমাণ ৯২ দশমিক ৬ শতাংশ। ৯০ শতাংশের ওপরে ভালো সড়ক রয়েছে শেরপুর, জামালপুর, ভোলা, বরিশাল, রাজবাড়ী, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও ও কিশোরগঞ্জ সড়ক বিভাগে।

বিপরীতে সওজের সবচেয়ে বেশি খারাপ সড়ক আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগে। ৩৮৮ কিলোমিটার সড়ক নেটওয়ার্কের মধ্যে ১৩৮ কিলোমিটার সড়কই ভাঙাচোরা। শতাংশের হিসাবে ধরলে খাগড়াছড়ির ৩৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ সড়ক খারাপ। একইভাবে মৌলভীবাজারের ৩৪ দশমিক ১৭ শতাংশ, বান্দরবানের ৩১ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৩০ দশমিক ২৪ শতাংশ, নরসিংদীর ২৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ সড়কের অবস্থা বেহাল।

বেহাল দশার মধ্যে রয়েছে ঢাকা সড়ক বিভাগের সড়কও। বাণিজ্য নগরী নারায়ণগঞ্জের সড়কের অবস্থাও বেশ খারাপ। এ দুই সড়ক বিভাগে খারাপ সড়কের পরিমাণ যথাক্রমে ২৭ দশমিক ৭৬ ও ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে ২০ শতাংশের বেশি খারাপ সড়ক রয়েছে লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, পাবনা, নড়াইল, রাঙ্গামাটি, হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, চাঁদপুর, নাটোর, কুষ্টিয়া ও পিরোজপুর সড়ক বিভাগে।

বিদ্যমান সড়কগুলো বাস্তব অবস্থা যাচাইয়ের জন্য প্রতি বছরই জরিপ করে সওজের এইচডিএম সার্কেল। অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে বের করা হয় সড়কের ইন্টারন্যাশনাল রাফনেস ইনডেক্স বা আইআরআই ভ্যালু। জরিপ করা সড়কগুলোর পরীক্ষা শূন্য থেকে ১২ পর্যন্ত নম্বর দেয়া হয়। আইআরআই ভ্যালু অনুযায়ী, নম্বর যত কম, সড়ক তত ভালো। এইচডিএমের সর্বশেষ জরিপটি করা হয়েছে গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে। সওজের সাড়ে ২২ হাজার কিলোমিটার সড়কের মধ্যে জরিপ করা হয়েছে সাড়ে ১৮ হাজার কিলোমিটার সড়ক।

জরিপের তথ্য বলছে, সওজের নেটওয়ার্কে বর্তমানে ভালো সড়ক রয়েছে ৬৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। চলনসই দশায় রয়েছে আরো ১৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ সড়ক। বাকি ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ বা ৩ হাজার ৬৪৭ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে খারাপ অবস্থায়। এর মধ্যে ৮৩৯ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’। ‘খারাপ’ অবস্থায় রয়েছে সাড়ে ৯৫০ কিলোমিটার সড়ক। বেশ দুর্বল অবস্থায় রয়েছে আরো প্রায় ১ হাজার ৮৫০ কিলোমিটার সড়ক। এসব সড়ক মেরামত করতে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার চাহিদার কথা জানিয়েছে এইচডিএম।

দেশের ভাঙাচোরা সড়কের বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানতে চাইলে সওজ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) মনির হোসেন পাঠান বলেন, সড়কের অবস্থান জানতে জরিপ করা আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। এর মাধ্যমে দেশের বিদ্যমান সড়কগুলোর অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায় এবং তার ভিত্তিতে সামনের বছরগুলো সড়ক-মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণে কী পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন হবে, তার একটা সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, মহাসড়ক নেটওয়ার্ক ধারাবাহিকভাবে উন্নত হচ্ছে। বর্তমানে সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নয়নে অনেকগুলো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি আঞ্চলিক ও জেলা সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়নেও বাস্তবায়ন হচ্ছে বেশ কয়েকটি প্রকল্প। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের সড়ক নেটওয়ার্কে খারাপ সড়কের পরিমাণ অনেকটাই কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

খবরঃ দৈনিক বণিক বার্তা।